West Bengal SSC Scam
সুপ্রিম কোর্টের রায়ে পশ্চিমবঙ্গের ২৫,৭৫৩ শিক্ষক-শিক্ষাকর্মী নিয়োগ বাতিল
সুপ্রিম কোর্টের একটি সাম্প্রতিক রায় পশ্চিমবঙ্গের শিক্ষা ব্যবস্থায় বড় ধরনের পরিবর্তন এনেছে। এই রায়ে ২০১৬ সালে পশ্চিমবঙ্গ স্কুল সার্ভিস কমিশন (ডব্লিউ বি এস এসসি) দ্বারা নিয়োগ করা ২৫,৭৫৩ জন শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মীর চাকরি বাতিল করা হয়েছে। এই সিদ্ধান্ত কলকাতা হাইকোর্টের একটি পূর্ববর্তী রায়কে বহাল রেখে দেওয়া হয়েছে, যেখানে নিয়োগ প্রক্রিয়ায় ব্যাপক দুর্নীতি ও অনিয়মের প্রমাণ পাওয়া গিয়েছিল। এই ঘটনা শুধু শিক্ষক নিয়োগে স্বচ্ছতার প্রশ্নই তুলে ধরেনি, বরং রাজ্যের শিক্ষা ব্যবস্থার উপর গভীর প্রভাব ফেলেছে।
২০১৬ সালে ডব্লিউ বি এস এসসি-র পরিচালিত নিয়োগ প্রক্রিয়ায় ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ ওঠে। এর মধ্যে ছিল:
মেধা তালিকায় কারচুপি: যোগ্য প্রার্থীদের বাদ দিয়ে অযোগ্যদের নিয়োগ দেওয়া।
ঘুষের বিনিময়ে চাকরি: অর্থের বিনিময়ে নিয়োগের অভিযোগ।
পক্ষপাতিত্ব: নিয়োগে স্বজনপ্রীতি ও রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ।
এই অভিযোগ গুলির পর তদন্তের দাবি ওঠে এবং বিষয়টি কলকাতা হাইকোর্টে পৌঁছায়। তদন্তে দুর্নীতির প্রমাণ পাওয়ায় ২০২২ সালে হাইকোর্ট পুরো নিয়োগ প্রক্রিয়া বাতিল করে এবং ২৫,৭৫৩ জনকে বরখাস্ত করার নির্দেশ দেয়। এর বিরুদ্ধে রাজ্য সরকার ও নিয়োগ প্রাপ্তরা সুপ্রিম কোর্টে আপিল করেন।সুপ্রিম কোর্টের রায় বিচারপতি ডি. ওয়াই. চন্দ্রচূড়ের নেতৃত্বে সুপ্রিম কোর্ট হাইকোর্টের রায়কে সমর্থন করে।
কোর্ট বলেছে: নিয়োগ প্রক্রিয়ায় এত বেশি অনিয়ম হয়েছে যে এটি পুরোপুরি দূষিত হয়ে গেছে।এই নিয়োগ গুলি বৈধ হিসেবে গণ্য করা সম্ভব নয়। কিছু নির্দোষ প্রার্থী ক্ষতিগ্রস্ত হলেও, ন্যায়বিচার ও স্বচ্ছতার জন্য এই পদক্ষেপ জরুরি। এই রায়ের মাধ্যমে কোর্ট দুর্নীতির বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থানের বার্তা দিয়েছে।
এই রায় পশ্চিমবঙ্গের শিক্ষা ব্যবস্থায় বড় প্রভাব ফেলবে। যেমন-
২৫,৭৫৩ জন শিক্ষক-শিক্ষাকর্মী বরখাস্ত হওয়ায় স্কুলগুলিতে শিক্ষকের ঘাটতি দেখা দেবে। এটি শিক্ষার্থীদের পড়াশোনায় ব্যাঘাত ঘটাতে পারে।
নতুন নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু করতে হবে এবং তাতে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে হবে।
এটি নিয়োগে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার গুরুত্ব তুলে ধরেছে এবং দুর্নীতির বিরুদ্ধে কঠোর বার্তা দিয়েছে।
সুপ্রিম কোর্টের এই রায় পশ্চিমবঙ্গের শিক্ষা ব্যবস্থায় একটি ঐতিহাসিক মুহূর্ত। স্বল্প মেয়াদে এটি শিক্ষকের অভাবের মতো সমস্যা তৈরি করলেও, দীর্ঘ মেয়াদে এটি শিক্ষা ব্যবস্থাকে আরও স্বচ্ছ ও ন্যায়সঙ্গত করবে। এই ঘটনা আমাদের মনে করিয়ে দেয় যে ন্যায়বিচার সততার কোনও বিকল্প নেই এবং অন্যায়ের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ অপরিহার্য।পশ্চিমবঙ্গের শিক্ষা ব্যবস্থা যদি এই শিক্ষা থেকে উপকৃত হয়, তবে ভবিষ্যতে শিক্ষার্থীদের জন্য একটি উন্নত ও স্বচ্ছ পরিবেশ তৈরি হবে।
Comments
Post a Comment