কথা বলার যন্ত্রপাতি
কথা বলার যন্ত্রপাতি
আমাদের প্রত্যেকের এই যন্ত্রপাতি গুলো আছে।
সবাই বলবে, বন্ধু লাগে।
বন্ধু তো জীবনে সবসময়ই লাগে। যদি বন্ধুর মতো বন্ধু হয়। আমি তা বলিনি। আমি জানতে চাইছি, কথা বলতে গেলে আমাদের শরীরের কোন কোন অঙ্গের প্রয়োজন হয়?
আমাদের প্রত্যেকের এই যন্ত্রপাতি গুলো আছে।
তোমরা কি জানো নিশ্বাস কাকে বলে?
শ্বাস নেওয়া হলো প্রশ্বাস আর শ্বাস ছাড়া হলো নিশ্বাস। আমরা শ্বাস নিই তখন সেই হাওয়াটা নাক আর মুখ দিয়ে ঢুকে শ্বাসনালি দিয়ে ফুসফুসে জমা হয়। আর যখন নিশ্বাস ছাড়ি, তখন ফুসফুস থেকে হাওয়া শ্বাসনালি দিয়ে এসে মুখ আর নাক দিয়ে বেরিয়ে যায়। কথা বলার জন্য এই বেরিয়ে আসা শ্বাসটা অর্থাৎ নিশ্বাস বায়ুটা দরকার।
এইবার তাহলে বলো প্রথমে কী কী জিনিস লাগে?
ফুসফুস আর নিশ্বাস।
একদম ঠিক। এই নিশ্বাসবায়ু যখন শ্বাসনালি দিয়ে গলায় আসে, সেখানে একটা যন্ত্র আছে, সেই যন্ত্রের মধ্যে দিয়ে হাওয়াটা বেরিয়ে যায়। যন্ত্রটার নাম স্বরযন্ত্র। গলা বলতে বুঝতে হবে এই স্বরযন্ত্রকে। স্বরযন্ত্রটা দেখতে আংটির মতো। এর মধ্যে দুটো খুব সূক্ষ্ম তন্ত্রী আছে। এদের স্বরতন্ত্রী বলে। হাওয়া যখন এই যন্ত্রের মধ্যে দিয়ে যায়, তখন এই তন্ত্রীদুটি কাঁপতে থাকে। এর ফলে ধ্বনির সৃষ্টি হয়। ধ্বনি বলতে গলার আওয়াজ।
নিশ্বাস যখন স্বরযন্ত্রের ভিতর দিয়ে এসে মুখের মধ্যে আসে, তখন জিভ তাকে নানারকমভাবে আটকায়। এই জিভ দিয়ে মুখের ভিতরের উপরের থেকে একেবারে পিছনটায় ঠেলা দাও,
দেখো তো জায়গাটা নরম না শক্ত?
বেশ নরম নরম। ঐ জায়গাটা হলো মূর্ধা।
আর তার সামনেটা কেমন?
বেশ শক্ত।ঐ শক্ত জায়গাটা হলো তালু।
তালুর সামনে উপরের দাঁতের সারি। নীচে জিভ, আর জিভের সামনে নীচের দাঁতের সারি। দাঁতের সামনে ওষ্ঠ আর অধর অর্থাৎ উপরের আর নীচের ঠোঁট।
এই সব মিলিয়ে হলো মুখ ।
এরকম আরেকটা অঙ্গ কথা বলতে গেলে দরকার হয়। বলো তো কী?
নাক। হাওয়াটা যখন বেরোয়, সে তো শুধু মুখ দিয়ে নয়, নাক দিয়েও বেরোয়। যখন নাক দিয়ে বেরোয় তখন নাকের ভিতরের দেয়ালে ঘসা লাগে। এর ফলে কথায় নাকি সুর লাগে। যখন আমরা চাঁদ বলি বা মামা বলি বা নয়ন বলি তখন এই রকমটা ঘটে।
ইংরেজি ক্লাসে সবাই জেনেছ যে 'টাং' (Tongue) কথাটার মানে 'জিভ'। তাহলে একটা প্রশ্ন করি যে টাং-এর মানে যদি জিভ হয়, তাহলে 'মাদার টাং' মানে তো 'মায়ের জিভ' হওয়ার কথা, কিন্তু তা তো আমরা বলি না; আমরা বলি 'মাতৃভাষা'। কেন এরকম বাংলা করি আমরা? জিভের সঙ্গে ভাষার কি কোনো সম্পর্ক আছে? আছেই তো। তোমরা শুধু 'টাং' শব্দটা খেয়াল করেছ। কিন্তু আরেকটা শব্দ আছে ইংরেজিতে, 'ল্যাংগুয়েজ', যার বাংলা অর্থ হলো ভাষা। সেই 'ল্যাংগুয়েজ' শব্দটির মধ্যেও আছে জিভের কথা। ল্যাটিন ভাষায় 'লিঙ্গুয়া' শব্দের অর্থ জিভ, সেই 'লিঙ্গুয়া' শব্দ থেকেই তো এসেছে ল্যাংগুয়েজ শব্দটা। আসলে কথা বলার সময় সবচেয়ে বেশি পরিশ্রম করে জিভ। সে মুখের মধ্যে নানাদিকে দৌড়ে বেড়ায়। তার সঙ্গে সঙ্গত করে ঠোঁট। এই জিভ মুখের মধ্যে নানা জায়গা ছুঁয়ে আর ঠোঁট দুটো একে অপরকে স্পর্শ করে আমরা এতরকম আওয়াজ করতে পারি।
তাহলে কথা বলতে কী কী লাগে?
প্রথমে দরকার হাওয়া যে হাওয়া ফুসফুস থেকে বেরোচ্ছে। তাহলে দ্বিতীয় দরকার ফুসফুসের। সেই হাওয়া শ্বাসনালি দিয়ে গেল। শ্বাসনালি হলো তৃতীয় দরকারি জিনিস। তারপর দরকার স্বরযন্ত্র। স্বরযন্ত্রের পর মুখের ভিতর জিভ আর উপরে ছাদের মতো মূর্ধা আর তালু। তারপর দাঁত আর শেষে ঠোঁট। এর সঙ্গে লাগে নাক।
Comments
Post a Comment